নতুন কারিকুলামে বই সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া আজকের সংবাদ সম্মেলনের বয়ান

Imrul Hassan Khan
0

নতুন কারিকুলামে বই সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া আজকের সংবাদ সম্মেলনের বয়ান

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আজ রোববারের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বক্তব্য হুবহু এরকম:
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জ্ঞানী, দক্ষ, দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক জনসম্পদ সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট উপায় শিক্ষা। তাই সরকার শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে আসছে। আমরা জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করছি। শিক্ষাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার জন্য নতুন নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টিসহ প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা লাভ সহজতর করার জন্য একদিকে শিক্ষা প্রশিক্ষণের উপর জোর দেয়া হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মাল্টিমিডিয়াসহ বিভিন্ন শিক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে বিনামূল্যে প্রত্যেক শিশুর হাতে পাঠ্যপুস্তক দেয়ার পরিসর ৫ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে। নতুন শিক্ষা বছর শুরু হওয়ার পূর্বেই পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। ২০১০ সালে ১৯ কোটি, ২০১১ ও ২০১২ সালে ২৩ কোটি করে বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ২৭ কোটি বই প্রদান করা হবে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে ভর্তিহার বৃদ্ধি পেয়েছে, সকল পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঝরে পড়ার হার কমতে শুরু করেছে এবং পাসের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার, প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশ ও দ্রুত বিশ্বায়নের কারণে শিখনচাহিদা দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। দ্রুত বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার উপযোগী জনসম্পদ সৃষ্টি সময়ের দাবি। এসব কিছু বিবেচনায় রেখে শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিশন ও কমিটি হয়েছে। কিন্তু নানান কারণে সর্বজনীন শিক্ষানীতি অর্জন করা যায়নি। এবারই প্রথম জাতি পেল একটি শিক্ষানীতি যা সর্বমহলে সমাদৃত। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজ ইতোমধ্যে আরম্ভ হয়েছে। এরই প্রধান একটি কাজ শিক্ষাক্রম উন্নয়ন। আজ থেকে ১৭ বছর পূর্বে ১৯৯৫ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বর্তমান শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বায়নের চাহিদা অনুসারে যোগ্য মানবসম্পদ সৃষ্টি এ শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে স¤ভব হচ্ছে না। শিক্ষানীতি ২০১০ এর ভিত্তিতে যুগের চাহিদা পুরণার্থে ২০১১ সালে নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়। শ্রেণিশিক্ষক থেকে আরম্ভ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক, জাতীয় পর্যায়ের বিষয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞদেরকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপ্স্তুক বোর্ডের এবং সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের বিশেষজ্ঞগণ জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২ উন্নয়ন করেন। এতে ৯০টি বিষয়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষাক্রম ২০১২-কে ভিত্তি করে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম-দশম শ্রেণির জন্য ১১১টি নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে। ১লা জানুয়ারি ২০১৩ থেকে নতুন পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে আরম্ভ হবে।

পরিবর্তনশীল সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বায়নের চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিপূর্ণ মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। নতুন শিক্ষাক্রমে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক ও অসম্প্রদায়িক নাগরিক সৃষ্টির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জ্ঞানার্জন ও জীবন- দক্ষতা অর্জনের সাথে সাথে সৃজনশীল ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া হয়েছে। কলেবর বৃদ্ধি না করে যুগের চাহিদানুসারে নতুন বিষয় ও বিষয়বস্তু সংযোজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইত্যাদি বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রজনন স্বাস্থ্য, এইচআইভি, অটিজম, তথ্য অধিকার ইত্যাদি বিষয়বস্তু সংযোজন করা হয়েছে। দেশ ও বিশ্বায়নের চাহিদার কথা মাথায় রেখে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পপুলেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যান রাইটস্্ এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ইত্যাদি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে আনা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তক, শ্রেণি-কার্যক্রম ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বেশ কিছু নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশের জন্য অনুসন্ধানমূলক ও শ্রেণিকক্ষে সৃজনশীল কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিখনসমস্যা চিহ্নিত করে নিরাময়মূলক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে শিখন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ ও নান্দনিকতাবোধ ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করে নির্দেশনা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের কর্মরত শিক্ষকমন্ডলীর আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং অভিভাবকসহ সকল স্তরের জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Tags

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top