সৃজনশীল পদ্ধতির জন্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক প্রশিক্ষণে দেয়া হয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন প্রকল্প (এসইএসডিপি) গ্রহণ করে সরকার। এ প্রকল্পে সরকারের বাজেট ৭৯৩ কোটি ৩৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২০১১-১২ অর্থ বছরেই বাজেট ছিল ১৪০ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে টাকার পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১১৪ কোটি ৫০ লাখ। গত মে পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬২ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সৃজনশীল অতি আধুনিক পদ্ধতি হলেও শিক্ষকদের শুধু প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে- কিভাবে পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন করতে হবে। ক্লাসে কিভাবে পড়াতে হবে এবং শিক্ষার্থীরা কিভাবে এ পদ্ধতির মাধ্যমে উপকৃত হবে সে সম্পর্কে কিছুই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। এ প্রশিক্ষণের নামে লাখ লাখ সরকারি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তবে ঘনঘন কক্সবাজারে ক্যাম্প করা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতির জন্য সারা দেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরই মধ্যে বৃহৎ একটি অংশকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রশ্ন করার বিষয়ে শিক্ষকদের প্রাথমিক ধারণা দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে আর কিছুই করা হচ্ছে না। শিক্ষকরা কিভাবে পড়াবেন, তাদের নতুন পদ্ধতিতে সম্পর্কে কোন জ্ঞান আছে কিনা তার কিছুই হচ্ছে না। ফলে শিক্ষকরা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছেন। যার দরুন ক্লাসে পড়ানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও গাইডনির্ভর হয়ে পড়েছেন। এতে উপকৃত হচ্ছেন গাইড ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষক জানিয়েছে, এ প্রশিক্ষণের ফলে শিক্ষকরা তেমন একটা উপকৃত হননি। অনেকের সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। এটা করে কোন লাভ হচ্ছে বলে মনে হয় না। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, মনিপুর স্কুল ও কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও কলেজ, উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন নামকরা স্কুলের অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, অনেকেই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কোচিং করে। কেউ শিক্ষকের বাসায় আবার কেউ বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারে। স্কুলের শিক্ষকরা বলে দেন কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কোচিং। রাজধানীর নামীদামি স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন এসব কোচিং। তাদের বক্তব্য হলো- সৃজনশীল প্রশ্নপত্র চালুর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গাইড বইয়ের বিক্রি বন্ধ। কিন্তু এ পদ্ধতি চালুর ফলে গাইড বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। শিক্ষাবিদদের মতে, নোট-গাইড শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশের পেছনে অন্তরায়। নোট-গাইড পড়লে শিক্ষার্থী চিন্তাশীল ও সৃজনশীল হয় না। এ কারণেই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট ও গাইড বই প্রকাশ এবং বিক্রি আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। মামলায় সরকার জিতেছে। কিন্তু এরপরও তা প্রকাশ, পরিবহন, বিপণন হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই গাইড বই কিনে থাকে। আর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ একাধিক গাইড কিনছে। বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন প্রকল্পে (এসইএসডিপি)
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে ১ কোটি ১০ লাখ ছাত্রছাত্রী। এসব ছাত্রছাত্রীর অনেকে কমপক্ষে দু’টি করে সেট গাইড বই কিনছে। এ গাইড বইয়ের ব্যাপারে রহস্যজনক কারণে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে এনসিটিবি, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণে প্রকাশ্যে গাইড বই প্রকাশ, পরিবহন ও বিক্রি হলেও তা নিরাপদই থেকে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেক সমালোচনার পর চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে এনসিটিবি থেকে গাইডের বিরুদ্ধে একশন নেয়ার জন্য পত্র দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসন ১৫টি কমিটিও গঠন করে ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন টিমই অভিযান চালায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সারা দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা আর কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৫ লাখ। সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় তারা এক প্রকার অন্ধকারেই রয়ে গেছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন প্রকল্পের (এসইএসডিপি) পরিচালক রতন কুমার রায় বলেন, আমরা শিক্ষকদের প্রশ্ন করার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তিনি বলেন, এটা সত্য এ প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের মৌলিক কোন পরিবর্তন হবে না। এতে অনেক সময় দরকার। তিনি বলেন, আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষকই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নানা তদবিরের ফলে অযোগ্যরাও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান। আমরা যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি তা দিয়েতো তাদের পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতির ফলে গাইড বিক্রি বেড়ে গেছে এটা আমার কাছে সঠিক মনে হয় না। কেননা, গাইড থেকেতো কোন প্রশ্ন কমন পড়বে না। তবে ধারণা পাওয়ার জন্য যদি কেউ গাইড পড়ে সেটাতো ক্ষতির কিছু নয়।
[বিঃদ্রঃ লেখাটি দৈনিক মানবজমিন এর ১৬ জুন ২০১২ এর একটি কলাম থেকে অনুপ্রাণিত ]
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে ১ কোটি ১০ লাখ ছাত্রছাত্রী। এসব ছাত্রছাত্রীর অনেকে কমপক্ষে দু’টি করে সেট গাইড বই কিনছে। এ গাইড বইয়ের ব্যাপারে রহস্যজনক কারণে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে এনসিটিবি, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণে প্রকাশ্যে গাইড বই প্রকাশ, পরিবহন ও বিক্রি হলেও তা নিরাপদই থেকে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেক সমালোচনার পর চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে এনসিটিবি থেকে গাইডের বিরুদ্ধে একশন নেয়ার জন্য পত্র দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসন ১৫টি কমিটিও গঠন করে ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন টিমই অভিযান চালায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সারা দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা আর কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৫ লাখ। সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় তারা এক প্রকার অন্ধকারেই রয়ে গেছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন প্রকল্পের (এসইএসডিপি) পরিচালক রতন কুমার রায় বলেন, আমরা শিক্ষকদের প্রশ্ন করার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তিনি বলেন, এটা সত্য এ প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের মৌলিক কোন পরিবর্তন হবে না। এতে অনেক সময় দরকার। তিনি বলেন, আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষকই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নানা তদবিরের ফলে অযোগ্যরাও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান। আমরা যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি তা দিয়েতো তাদের পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতির ফলে গাইড বিক্রি বেড়ে গেছে এটা আমার কাছে সঠিক মনে হয় না। কেননা, গাইড থেকেতো কোন প্রশ্ন কমন পড়বে না। তবে ধারণা পাওয়ার জন্য যদি কেউ গাইড পড়ে সেটাতো ক্ষতির কিছু নয়।
[বিঃদ্রঃ লেখাটি দৈনিক মানবজমিন এর ১৬ জুন ২০১২ এর একটি কলাম থেকে অনুপ্রাণিত ]